হাইড্রোজেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে ইউরোপ-এশিয়া

৭০ হাজার কোটি ডলারের বাজার দখলের লড়াই

0

মধুর সমস্যায় পড়েছেন গ্রিন হাইড্রোজেন সিস্টেমসের প্রধান নির্বাহী (সিইও) নিয়েলস-আর্ন ব্যাডেন। ডেনমার্কে বিদ্যুৎ থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করছে তার কোম্পানি। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ একটি ফ্যাসিলিটি হতে যাচ্ছে। কিন্তু এ কারখানাও ব্যাডেনের কাছে ছোট মনে হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে হাইড্রোজেনের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে নির্মাণাধীন কারখানা তা পূরণ করতে পারবে না বলে মনে করছেন ব্যাডেন। এ কারণে কারখানার আকার দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। ব্যাডেন বলেন, ‘২০১৪ সালে আমি যখন এ কোম্পানিতে যোগদান করি, তখন বলতে গেলে হাইড্রোজেনের কোনো বাজারই ছিল না। তবে গত বছর এ ইলেকট্রোলাইজারের চাহিদা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। এখন এ সম্ভাবনা কাজে লাগানোটাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কেবল গ্রিন হাইড্রোজেন সিস্টেমসই যে উদ্ভূত সুযোগ কাজে লাগাতে উঠেপড়ে লেগেছে, তা নয়। বরং বিভিন্ন দেশের সরকার, বৃহৎ জ্বালানি কোম্পানি, অটোমোবাইল জায়ান্ট ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও মনে করছে, গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর যে উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে নেয়া হয়েছে, তাতে মূল ভূমিকা পালন করবে হাইড্রোজেন জ্বালানির ব্যবহার। ফলে সামনের দিনগুলোয় এর বিশাল বাজার তৈরি হবে, তা সহজেই অনুমেয়।

ব্লুমবার্গ এনইএফের হিসাব অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ হাইড্রোজেন জ্বালানির বাজার হবে ৭০ হাজার কোটি ডলারের। আর এ বাজার ধরার জন্য বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

হাইড্রোজেন অবকাঠামোর পেছনে প্রায় ৪৭ হাজার কোটি ইউরো (৫৫ হাজার কোটি ডলার) বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)। নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া হাইড্রোজেনের ব্যবহার বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৫০০ কোটি ডলারের একটি হাইড্রোজেনভিত্তিক অ্যামোনিয়া কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সৌদি আরব।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান রাইস্ট্যাড এনার্জির হেড অব রিনিউয়েবলস জেরো ফারুজ্জিও বলেছেন, ‘হাইড্রোজেনের বিশাল বাজারে নিজেদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে দেশগুলো একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়েছে। এ বাজারে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন দেশের সরকার যেভাবে হাইড্রোজেন প্রকল্পে ভর্তুকি দিচ্ছে, তাতে আমরা একে হাইড্রোজেন যুদ্ধ বলতেই পারি।’

ফারুজ্জিও ও তার দল বিশ্বজুড়ে ৬০ গিগাওয়াটের বেশি হাইড্রোজেন প্রকল্প নিয়ে গবেষণা করছেন। এসব প্রকল্প পরিচালিত হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি দ্বারা। প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগেরই ঘোষণা এসেছে চলতি বছরে। হাইড্রোজেন প্রকল্পের শীর্ষ প্লেয়ারদের তালিকায় নাম নেই যুক্তরাষ্ট্রের। এটি অবশ্য অননুমেয় কোনো বিষয় নয়। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছেন। এমনকি তিনি জলবায়ু সংরক্ষণ-সম্পর্কিত প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের উদ্যোগও নিয়েছেন। আগামীকালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলই বলে দেবে, যুক্তরাষ্ট্র জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকবে, নাকি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের পথে হাঁটবে।

জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজন ব্যবহার নতুন কোনো ঘটনা নয়। এটি প্রায় শতাব্দী পুরনো আইডিয়া। ১৯২৭ সালে সার উৎপাদনের কাজে ব্যবহারের জন্য নরওয়েতে একটি বৈদ্যুতিক মেশিন স্থাপন করা হয়, যেটি হাইড্রোজেন তৈরি করত। এরপর জেপেলিন, রকেট ইঞ্জিন ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে এ গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহারের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। প্রথমত, এটি অনেক ব্যয়বহুল। দ্বিতীয়ত, এটি সংরক্ষণ করা বেশ কঠিন একটি কাজ। তৃতীয়ত, এটি অতিমাত্রায় দাহ্য একটি গ্যাস। এ কারণে বছরের পর বছর ধরে হাইড্রোজেন জ্বালানির ব্যবহার তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। তবে বর্তমানের পরিস্থিতি ভিন্ন বলে জানিয়েছেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইফোরটেকের পরিচালক ডেভিড হার্ট। তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল, যখন কেউই জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিতে মাথা ঘামাত না। তবে একসময় এ চিন্তায় পরিবর্তন আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এটি পাঁচ বছরেও হতে পারে আবার ৫০ বছরেও হতে পারে।’ এই ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা মাথায় রেখেই দেশগুলো চেষ্টা করছে হাইড্রোজেন জ্বালানির বাজারে নিজেদের আধিপত্য জোরদার করতে। ব্লুমবার্গ

উত্তর দিন