জ্বালানি বাজারে প্রাণ ফিরিয়ে আনছে চাঙ্গা ই-কমার্স

0

কভিড-১৯ মহামারীতে থমকে গেছে বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য। চাহিদা ও সরবরাহ সংকটে মন্দা দেখা গেছে প্রায় সব খাতেই। জ্বালানি খাতও এর ব্যতিক্রম নয়। এপ্রিলে ভয়াবহ দরপতনের বিপর্যয়ে পড়ে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার। এদিকে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত মহামারী একটি খাতের ব্যবসা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেটি হলো ই-কমার্স খাত। ঘরে অবস্থানের বাধ্যবাধকতায় অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্যে জোয়ার তৈরি হয়েছে। আর এই জোয়ার জ্বালানি বাজারের জন্যও আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। খবর ব্লুমবার্গ।

হোম অফিসের যুগে যে দৃশ্য বেশি দেখা যাচ্ছে তা হলো, গ্রাহকের দোরগোড়ায় পণ্য পৌঁছে দেয়ার জন্য ডেলিভারি ভ্যানের চলাচল। অ্যামাজন ডটকমের মতো ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর ডেলিভারি ট্রাকের আনাগোনা এখন সর্বত্র দৃশ্যমান। ভোক্তারা এখন অনলাইন শপিংয়ের দিকে বেশি ঝুঁকছে। কোম্পানিগুলোও তাদের সাপ্লাই চেইন সমুন্নত রাখতে মজুদ বাড়ানোর নীতিতে হাঁটছে। ফলে সব ধরনের পণ্য সরবরাহের জন্য ডেলিভারি ভ্যান, ট্রাক, ট্রেন ও জাহাজের চলাচল বেড়েছে।

বিষয়টি বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের জন্য বড় উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করছে। কারণ পণ্যবাহী যান চলাচল বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়া।

ব্ল্যাক গোল্ড ইনভেস্টরসের প্রধান নির্বাহী গ্যারি রস দীর্ঘদিন ধরেই জ্বালানি বাজার পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে পণ্যবাহী যানের চলাচল অনেকাংশে বেড়েছে। মানুষের হাতে এখন যতটুকু অর্থ রয়েছে, তা তারা পণ্য ক্রয়ের পেছনে ব্যয় করছে।’

ই-কমার্সের জোয়ারে জ্বালানি বাজার কীভাবে উপকৃত হচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়। গত চার সপ্তাহে দেশটিতে বড় আকারের ট্রাকের চলাচল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ বেড়েছে। ইউএস ফেডারেল হাইওয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের উপাত্ত এমনটাই জানাচ্ছে।

পণ্য পরিবাহী কোম্পানিগুলোও এ উত্তরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ রেলওয়ে কোম্পানি সিএসএক্স করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী জেমস ফুটি জানান, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে তাদের পণ্য পরিবহন করোনাপূর্ব সময়ের চেয়েও বেড়েছে।

পণ্য পরিবহনের চাপ এতটাই বেড়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ট্রাক কোম্পানি গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। ফলে তারা প্রায় ২৫ শতাংশ কার্যাদেশ ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ২০১৯ সালে এ হার ছিল গড়ে ৬ শতাংশ।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে যে পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, তার ১৬ শতাংশের ভোক্তা পণ্য পরিবাহী ট্রাকগুলো। আর ডিজেলের বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় অর্ধেকই আসে ট্রাক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে। সুতরাং ট্রাক চলাচল বেড়ে যাওয়ার অর্থ জ্বালানি বাজার চাঙ্গা হওয়া।

বছরের শেষের দিকে এ চাঙ্গা ভাব আরো বাড়বে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ সামনে আসছে বড়দিনের মৌসুম। আর এ সময় ই-কমার্স সাইটগুলোয় চলে মূল্যছাড়ের মহোৎসব। এ সময় ক্রেতাদের মধ্যেও কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা বেড়ে যাওয়ার অর্থ ডেলিভারি কোম্পানিগুলোর ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া। ডিএইচএল জানিয়েছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার বড়দিনের মৌসুমে তাদের সরবরাহ ব্যবসা ৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে তারা আশা করছে।

এদিকে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে কয়েক মাস সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়েছিল। এতে অনেক কোম্পানিকেই মজুদ সংকটে ভুগতে হয়েছে। সেই অচলাবস্থার পুনরাবৃত্তি এড়াতে কোম্পানিগুলো তাদের মজুদ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। এ কারণেও পণ্য সরবরাহ খাত তথা জ্বালানি বাজারে চাঙ্গা ভাব ফিরে এসেছে।

উত্তর দিন