এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ভিআইপিদের স্বস্তি

হাসানুল বান্না

0

যান চলাচলের প্রথম দিনে উচ্ছ্বাস, স্বস্তি, আক্ষেপের মিশ্র চিত্র ছিল ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। গতকাল সকাল ৬টায় সর্ব সাধারণের জন্য দ্বার খুলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের। তখন থেকেই শুরু হয় যান চলাচল। মনে উচ্ছ্বাস নিয়ে মানুষ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠেন। ঘণ্টার পথ পাড়ি দেন ১০ মিনিটে। দিনভর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সাঁই সাঁই করে চলতে দেখা যায় গাড়ি। তবে বেশির ভাগ গাড়িই ব্যক্তিগত। এক্সপ্রেসওয়েতে খুব একটা চোখে পড়েনি কোনো বাস, ট্রাক কিংবা গণপরিবহন। তাই নিচের রাস্তায় সেই চিরাচরিত যানজট ঠেলে গণপরিবহনে সাধারণ মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। এ ছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলেও নিচের সড়কে যানজটের চিত্র বদল না হওয়ায় আক্ষেপও করেছেন অনেকে। কাওলা থেকে ফার্মগেটের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার।

সড়ক দিয়ে এই দূরত্ব যেতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টার অধিক সময় লেগে যায়। তবে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিটে চলে আসতে পারছে যানবাহনগুলো। এরমধ্যে পথে কোনো যাত্রাবিরতি, যানজটের ভোগান্তি নেই। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রথম দিনে সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টায় মোট যানবাহন চলেছে ১০ হাজার ৮৫৪টি। এরমধ্যে এয়ারপোর্ট থেকে ৬ হাজার ৬১৬টি, কুড়িল থেকে এক হাজার ১৯৮টি, বনানী থেকে এক হাজার ৯১টি ও তেজগাঁও থেকে এক হাজার ৯৪৯টি গাড়ি এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করেছে। গাড়ির চালকরাও জানাচ্ছেন তাদের স্বস্তির কথা। যানজটের নগরীতে এত দ্রুত সময়ে উপর দিয়ে চলাচল করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন তারা। গাড়ির মালিকরাও খুশি। তারা বলছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফলে কর্মক্ষেত্রে যেতে তাদের সময় কম লাগছে। বেঁচে যাচ্ছে কর্মঘণ্টা। এই সময়টা তারা কর্মক্ষেত্রে ব্যয় করতে পারবেন।

 

এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে আসা হাসানুজ্জামান উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়েছে। উত্তরা থেকে আসতে কর্মঘণ্টার অধিকাংশ সময় রাস্তায় চলে যায়। এই সময়টা এখন কাজে লাগাতে পারবো। তাছাড়া রাস্তায় যানজটের জন্য অনেক জ্বালানি নষ্ট হয়। সেটাও কমে যাবে। আমাদের জীবনযাত্রা সহজ করার জন্য সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। পিকআপের চালক মাসুদ বলেন, আমরা ধীরে ধীরে চালিয়ে ব্রিজ দেখতে দেখতে আসছি। তাও অনেক কম সময় লাগছে। অন্য সময় দুই-আড়াই ঘণ্টা লাগতো। তবে  পিকআপের জন্য টোল ৫০ টাকা হলে ভালো হতো। প্রাইভেট কারে রাইড শেয়ারিং করেন হালিম তালুকদার। যাত্রী নিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে এসে তিনিও সন্তোষ প্রকাশ করেন। হালিম বলেন, কমপক্ষে একঘণ্টা সময় বেঁচে গেল। পুরো কাজ শেষ হলে আরও বেশি সুবিধা হবে আমাদের জন্য। সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চললে যানজট কমে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে তার সুবিধা ব্যক্তিগত গাড়িগুলো সবচেয়ে বেশি পাবে। সাধারণ মানুষ কম সুবিধা পাবে। গতকাল এক্সপ্রেসওয়েতে চলা যানবাহনগুলোর চিত্রও অনেকটা তেমন দেখা গেল। ব্যক্তিগত গাড়ির বাইরে কেবল মাঝেমধ্যে দুই-একটা পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান চলছিল এক্সপ্রেসওয়েতে। তবে খুব একটা দেখা যায়নি গণপরিবহন। গণপরিবহনগুলোর চালক ও হেলপাররা জানান, ঢাকার বাসগুলো লোকাল পরিবহন। এগুলো প্রতিটা স্টপেজ থেকে যাত্রী উঠানামা করতে হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করলে যাত্রী পাওয়া যাবে না। তাই নিচের সড়ক দিয়ে যানজট ঠেলেই তাদের চলতে হবে। এ ছাড়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা এড়াতে দুই চাকা ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল করতে না পারায় মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজিতে চলাচলকারীদের মধ্যে আক্ষেপও ছিল। রফিক মিয়া নামের এক সিএনজি চালক বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে তো আমাদের উঠতে দেয় না। যানজটের মধ্যেই আমাদের আসতে হয়। এ ছাড়া মোটরসাইকেল চালকরা পদ্মা সেতুর মতো আলাদা লেন করে মোটরসাইকেল চালু করার দাবিও জানান।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা থেকে ফার্মগেট অংশে উঠানামার জন্য মোট ১৫টি র‍্যাম্প (সংযোগ সড়ক)- এর মধ্যে ১৩টি চালু রয়েছে। বাকি দুইটির কাজ এখনো চলমান রয়েছে। এর একটি হলো- মহাখালী আরেকটি বনানীতে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পুরোপুরি সুফল পেতে আগামী বছর জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থাৎ তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত কাজ শেষ হলে নগরীর যানজট কমবে বলে আশা তাদের।

উত্তর দিন