রাজাকারদের তালিকা প্রণয়নের বিধান রেখে নতুন করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২০’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকের পর সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০০২ সালের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ছিল। সেই আইন পরিপূর্ণভাবে বর্তমান সময়ের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। তাই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের নতুন খসড়া করেছে। এ আইন পাস হলে আগের আইন বাতিল হয়ে যাবে।
‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, তাদের একটা তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল।’
২০০২ সালের আইনে এ বিধান ছিল না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাজাকারের তালিকা করার বিষয়টি খসড়া আইনে রাখা হয়েছে। আইনে সব বিষয়ে ডিটেইল করা নেই, এটা রুল করবে। স্বাধীনতাবিরোধী বলতে কী বোঝাবে, রুলে তা বিস্তারিত বলা থাকবে। আগে আইন হোক এরপর বিধি করা হবে।
প্রায় এক দশক আগে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর রাজাকারের তালিকা তৈরির দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় গত বছর বিজয় দিবসের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধীর’ তালিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু ওই তালিকায় গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম আসায় ক্ষোভ আর সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সংশোধনের জন্য ওই তালিকা স্থগিত করা হয়।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, প্রস্তাবিত নতুন আইনে আগের মতোই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশের কথা বলা আছে। অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে গেজেটভুক্ত ও সনদপ্রাপ্ত অমুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল।
কাউন্সিল মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদধারীদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবে জানতে চাইলে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এটা নির্ভর করবে কেমন অপরাধ করেছেন তার ওপর। শুধু সার্টিফিকেট নিয়েছে, নাকি অন্য সুবিধা নিয়েছে, নাকি দুটোই নিয়েছে। অথবা তার সন্তানরাও সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন কিনা, আইন অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশ করা হবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
জরিমানার পরও মানুষের মাস্ক পরা নিশ্চিত না হওয়ায় গতকালের বৈঠকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রচার কার্যক্রমের নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মাস্ক পরা নিশ্চিতের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মাঠ প্রশাসন থেকে আমাদের কাছে সাজেশন এসেছে। তারা বলছেন, জরিমানা করার পর, জেল দেয়ার পরও মানুষের মধ্যে সেভাবে
সচেতনতা আসছে না। সেক্ষেত্রে কাউকে ফাইন করলে সে বলে—ওই যে চার-পাঁচজন মাস্ক ছাড়া যাচ্ছে, ওদের ফাইন করেন। সেজন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে প্রচার করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এফবিসিসিআইসহ সব বাণিজ্য সংগঠনের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে এটি নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে তাদের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রচারণা চালাতে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনে যারা আছে তাদের সবাইকে ক্লিয়ার ইনস্ট্রাকশন দিয়েছেন, যে প্রোগ্রামেই যারা আসবে, যত যাই করুক, প্রোগ্রামে অবশ্যই তাদের মাস্ক পরতে হবে। তারা ম্যাসিভ ক্যাম্পেইন করবে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আরো বলেন, যে ভাবসাব দেখা যাচ্ছে, যেভাবে বাড়ছে তাতে এটা আল্লাহ না করুক শীত যদি একটু বেশি পড়ে তাহলে আরো নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়বে। শুধু জেল-জরিমানা করলেই হবে না।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় প্রধানমন্ত্রী কাপড়ের মাস্ক দিতে বলেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তাহলে জানগণ সেগুলো ধুয়ে ব্যবহার করতে পারবে। এখন থেকে তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক দিতে জেলা প্রশাসনসহ মাঠ প্রশাসনের সবাইকে বলে দিয়েছি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, এছাড়া বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড’ শীর্ষক কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন ও আর্টিক্যাল অব অ্যাসোসিয়েশনের সংশোধিত খসড়া ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদনের ফলে এখন থেকে সরকারি সব দপ্তরের তথ্য গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্কের কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টারে রাখা বাধ্যতামূলক। এছাড়া টাকা দিয়ে বেসরকারি খাতের তথ্যও এ ডাটা সেন্টারে রাখা যাবে।
তিনি বলেন, মূল কথা প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ একটা করে সার্ভার বসায়, এখন থেকে কেউ আর তা পারবে না। সবার ডাটা এই কালিয়াকৈরে ডাটা সেন্টার কোম্পানির আন্ডারে স্টোর করতে হবে। কারণ ওখানে সব সেফটি ও সিকিউরড থাকবে। এটার একটা ব্যাকআপ আছে যশোরে। কোনো কারণে যদি কালিয়াকৈরে ডিজাস্টারও হয়, সব ডাটা যশোরের ব্যাকআপ সেন্টার থেকে উদ্ধার করা যাবে।
এদিকে মন্ত্রিসভা প্রতি বছরের ১৮ ডিসেম্বর তারিখকে ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে দিবসটিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ-সংক্রান্ত পরিপত্রের ‘খ’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন।