স্বল্পোন্নত-উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন দেয়া উচিত

কে এন আলিফ

0

স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিনা মূল্যে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল আসেম (দি এশিয়া-ইউরোপ মিটিং) অর্থমন্ত্রী পর্যায়ের ১৪তম সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান তিনি।

করোনার কারণে এবার আসেম অর্থমন্ত্রী পর্যায়ের সভাটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের সভার আয়োজক বাংলাদেশ। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় ৪৫টি দেশের অর্থমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এবারের সভার মূল প্রতিপাদ্য ‘কভিড-১৯ মোকাবেলা: একটি শক্তিশালী, টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক পুনর্গঠন নিশ্চিতকরণ’।সভায় পাঠানো ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি বিশ্ব শিগগিরই কভিড-১৯-এর কার্যকর ভ্যাকসিন পেতে চলেছে। স্বল্পোন্নত (এলডিসি) এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো যেন এ ভ্যাকসিন বিনা মূল্যে পায়, সে ব্যবস্থা করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা প্রত্যাশা করছি উন্নত দেশগুলো, বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ ক্ষেত্রে উদার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসবে।

শেখ হাসিনা বলেন, অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এমন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে এশীয় ও ইউরোপীয় জাতিগুলোর জন্য আসেম হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য চলমান ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে আমরা এ সভা অনেক আড়ম্বরপূর্ণভাবে আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে আমাদের এ সভাটি ভার্চুয়াল ভিত্তিতে আয়োজন করতে হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারী সব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; জনগণের বেশির ভাগই আয় হ্রাস এবং চাকরি হারানোর সম্মুখীন হয়েছে। দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য খাত কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। অধিকাংশ দেশেই টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের সূচকগুলোর অর্জন ও কষ্টার্জিত সমৃদ্ধি এখন হুমকির সম্মুখীন। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এ মহামারীর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে করোনার প্রভাব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এক দশক ধরে অব্যাহতভাবে উচ্চপ্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। তিনি বলেন, আর্থসামাজিক সূচকেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে ও ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা ‘ভিশন ২০৪১’ গ্রহণ করেছি। এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশটা ভালো অবস্থানে ছিল। তবে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সুবিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ করা সত্ত্বেও এ মহামারী আমাদের অগ্রযাত্রার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। আমার সরকার এখন পর্যন্ত আমাদের অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরের পাশাপাশি আমাদের সমাজের বিভিন্ন খাতকে সহায়তা করার জন্য ১৪ দশমিক ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতুল্য ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এ সহায়তা প্যাকেজের পরিমাণ জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশের সমান। কয়েক মাসব্যাপী মহামারীর প্রাথমিক ধাক্কা সামলানোর পর আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। রফতানি, প্রবাসী আয়, কৃষি উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বশেষ প্রবণতা এটি নির্দেশ করে যে আমাদের অর্থনীতি এখন টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে পুনরায় ফিরে আসছে।

তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারী বহুমুখী বৈশ্বিক সমস্যা তৈরি করেছে এবং বৈশ্বিকভাবেই এটির সমাধান করা দরকার। এ সংকট মোকাবেলার জন্য একটি সুসমন্বিত রোডম্যাপ প্রয়োজন। রাজস্ব প্রণোদনা, কনসেশনাল আর্থিক সহায়তা এবং ঋণের মাত্রা কমানোর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত এলডিসি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বেইল আউটের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জি-৭, জি-২০, ওইসিডি দেশগুলো, বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোকে অবশ্যই উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রতিশ্রুত অথচ অদ্যাবধি অপূরণকৃত কোটামুক্ত বাজার সুবিধা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করতে হবে।

সভা শেষে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কভিড-১৯ ও দেশের অর্থনীতিকে ঘিরে সামাজিক বিভিন্ন স্তরে যে ক্ষতবিক্ষত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, সেসব বিষয় আলোচনা হয়েছে আসেম সভায়। এখন সবার অবস্থা তো এক রকম নয়। কোনো দেশের অবস্থা ভালো আছে, আল্লাহর অশেষ রহমতে এ মুহূর্তে আমরাও ভালো আছি। কিন্তু অন্যান্য দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। এগুলো অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে মোকাবেলা করা দরকার।

তিনি বলেন, আজকের সভায় উঠে এসেছে যে কত দ্রুত এ সমস্যাগুলো আমরা সমাধান করতে পারি এবং পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক স্তরে নিয়ে যেতে পারি। এখন আমাদের মূল উদ্দেশ্য এটার (কভিড-১৯) হাত থেকে নিস্তার পাওয়া। এর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্যই আজকে আমাদের একত্র হওয়া।

করোনা থেকে রক্ষা পেতে আগামীতে সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের পলিসি অবজেকটিভ পুরোটাই ফ্লেক্সিবল। আমাদের যখন যা দরকার হবে তখন তা-ই করব। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া গেলে বাংলাদেশে সেটাকে নিয়ে আসতে হবে। দেশের জনসংখ্যার ভিত্তিতেই ভ্যাকসিন আসবে। এখানে অসমতার ভিত্তিতে কিছু হতে পারবে না। আর তার (প্রধানমন্ত্রী) দাবি হচ্ছে, সারা বিশ্বে যারা ধনী সম্প্রদায় তারা ভ্যাকসিনের ব্যয় বহন করবে। আমি মনে করি এ দাবি খুবই যুক্তিযুক্ত এবং সারা বিশ্বের মেজরিটি তার দাবির পক্ষে মতামত পেশ করবেন।

উত্তর দিন