প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সবসময় চেয়েছি আমাদের এ সমুদ্রসীমা শুধু রক্ষা করা না, সমুদ্রসম্পদটাও যাতে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে লাগে, তার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা ব্লু ইকোনমির ধারণার ওপর কাজ করে যাচ্ছি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গতকাল নৌবাহিনীর জাহাজ বানৌজা ওমর ফারুক, আবু উবাইদাহ, প্রত্যাশা, দর্শক ও তল্লাশির কমিশনিং প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এ সময় স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির পিতার নেতৃত্বে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের যে অধিকার আছে, এ অধিকারের ব্যাপারেও তিনি প্রথম সমুদ্র্রসীমা আইন করেন ১৯৭৪ সালে। এমনকি জাতিসংঘেও তখনো সমুদ্রসীমা আইন হয়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সে দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা দেখেছি, তিনি ’৭৪ সালেই আইনটি করে দিয়ে যান।
তিনি বলেন, আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। জাতির পিতা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে বলেছেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি। কিন্তু যদি বাংলাদেশ কখনো বহিঃশত্রুর আক্রমণে আক্রান্ত হয়, তাকে মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা আমরা অর্জন করতে চাই। তাই আমরা সমুদ্রসীমা রক্ষার জন্য নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলছি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলে গেছেন, ‘ভূরাজনৈতিক প্রয়োজনে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠন করা হবে।’ আমরা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। নৌবাহিনীকে আধুনিক, দক্ষ, শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ ও বিদ্যমান জাহাজগুলোর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা বাস্তবমুখী পরিকল্পনা নিই। শুধু নৌবাহিনী বলে না, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য তিনি যে প্রতিরক্ষা নীতিমালা করে দিয়ে গিয়েছিলেন ১৯৭৪ সালে, তার আলোকে আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি।
এ সময় নৌবাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নৌবাহিনীর সদস্যরা লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা বিধান করে যাচ্ছেন। এটা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
শান্তিকামী বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে নৌবাহিনী এরই মধ্যে দেশবাসীর আস্থা ও প্রশংসা অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষ করে এবার মহামারীর সময়ে আমাদের নৌবাহিনী যথাযথ ভূমিকা রেখেছে। তাছাড়া যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও তারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যথাযথ ভূমিকা রাখে ও মানুষকে সাহায্য করে।
চট্টগ্রামে বানৌজা ঈসা খান নৌ জেটিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জাহাজগুলোর অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল। পরে প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
এ সময় গণভবনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রমুখ।