বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘হেলিকপ্টার সংযোজন কেবল শুরু, এ যাত্রা বিজিবির সার্বিক কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি অর্পিত দায়িত্ব পালনে এখন থেকে বিজিবি সদস্যরা জলে, স্থলে ও আকাশপথে বিচরণ করবেন।’
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এয়ার উইংয়ের জন্য কেনা দুটি এমআই-১৭১ই হেলিকপ্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গতকাল রোববার সকালে তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়ালি পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সব সময় দেশপ্রেম, সততা ও ইমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এই বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখবেন। একদিন এ বাহিনী বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মর্যাদা লাভ করবে—এ আমার আশা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিজিবি এখন অন্যান্য বাহিনীর মতো ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত হয়েছে। আমরা আধুনিক হেলিকপ্টার কিনেছি। প্রকৃতপক্ষে হেলিকপ্টারের কথা আমি নিজেই উদ্যোগ নিয়ে বলেছিলাম। কারণ, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দুর্গম পার্বত্য এলাকার নিরাপত্তা দেওয়া একান্ত দরকার। সে কারণেই এই হেলিকপ্টার ক্রয় করে দিয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা মুজিব বর্ষ উদ্যাপন করছি, এই মুজিব বর্ষেই বিজিবি হেলিকপ্টার পেল, এটা অত্যন্ত গৌরব ও আনন্দের বলে আমি মনে করি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দুটি হেলিকপ্টার উদ্বোধনের মাধ্যমে (বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ও বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ) আমি আজ বিজিবিকে একটি “ত্রিমাত্রিক বাহিনী” হিসেবে ঘোষণা করছি।’
জাতির পিতার ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের তৃতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে বলেছিলেন, ‘ইমানের সঙ্গে কাজ করো, সৎ পথে থেকো, দেশকে ভালোবেসো।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা শুধু বিজিবি নয়, দেশের সবার জন্যই প্রযোজ্য। তিনি বিজিবির উন্নয়নে তাঁর সরকারের পক্ষে যা যা করণীয়, তা করারও আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে বিজিবির একটি সুসজ্জিত চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্তের সার্বিক সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার জন্য বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত অতি পুরোনো ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্রের পরিবর্তে আধুনিক, যুগোপযোগী ও কার্যকরী ট্যাংকবিধ্বংসী মিসাইল ক্রয় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ৫৩৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তে নতুন ৬২টি
বিওপি নির্মাণের মাধ্যমে ৪০১ দশমিক ৫ কিলোমিটার সীমান্ত ইতিমধ্যে নজরদারিতে আনা হয়েছে। অবশিষ্ট অরক্ষিত সীমান্তে আরও বিওপি স্থাপন করা হবে।
বিজিবিকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ লক্ষ্যে আমরা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ পাস করেছি। একটি বিশ্বমানের আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য “বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১” পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বিজিবির জনবল বৃদ্ধি করে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ১৪৬ জন নিয়োগ করেছে। আরও ১৫ হাজার জনবল বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা তিনটি ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান
প্রধানমন্ত্রী গতকাল দুপুরে মাদারীপুর, ফরিদপুর ও মৌলভীবাজারের নবনির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন। সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শামসুল হক, মাদারীপুরের মুনীর চৌধুরী ও মৌলভীবাজারের মিসবাহুর রহমানকে শপথবাক্য পাঠ করান। গত ২০ অক্টোবর উপনির্বাচনে জয়ী হন তাঁরা তিনজন।